পবিত্র ঈদুল আজহায় খুলনায় কোরবানির গরুর চামড়া নিয়ে ফের জমেছে অভিযোগ আর অস্বস্তি। বাজারে দাম কম, সেই সঙ্গে চামড়ার মান নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র মতবিরোধ। কেউ বলছেন, চামড়ায় রোগ, কেউ বলছেন অজুহাত।
রোববার থেকে খুলনার শেখপাড়া, টুটপাড়া ও বয়রা এলাকার চামড়ার বাজারে দেখা গেছে অস্বাভাবিক কমদামে চামড়া বিক্রির চিত্র। অনেক জায়গায় ৪–৫ মণ ওজনের বড় গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র ৪০০ টাকায়। কোথাও কোথাও ১০০ টাকায়ও নিতে চেয়েছেন ক্রেতারা।
বিক্রেতারা বলছেন, চামড়ার দাম শুনেই রাগ চেপে রাখা কঠিন। ছোট বয়রার বাসিন্দা মো. মাকসুদ আলম বলেন, “১ লাখ ১৫ হাজার টাকার গরুর চামড়া বিক্রি করতে এসে শুনি দাম ৪০০ টাকা। সরকারের নির্ধারিত দাম ১,০৫০ টাকা, অথচ ওরা বলছে রোগ আছে। চামড়ায় যদি লোমে দাগ থাকে, ট্যানারিতে লোম তো ফেলে দেওয়া যায়। সেটা কি এত বড় অজুহাত হতে পারে?”
টুটপাড়ার আরেক বিক্রেতা রহমান ফারাজি বলেন, “গত বছর একই সাইজের চামড়া ৬০০ টাকায় বিক্রি করেছি। এবার দাম বলা হচ্ছে ১০০ টাকা। চামড়া বিক্রি করে মাদ্রাসায় দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল, এখন লজ্জায় মাথা নত।”
ক্রেতাদের পাল্টা দাবি, চামড়ায় সমস্যা আছে। চামড়া ব্যবসায়ী মাসুদ লেদার জানান, দুই দিনে দেড় শতাধিক চামড়া কিনেছেন তিনি। দাম দিয়েছেন ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। তার ভাষায়, “চামড়ার প্রায় প্রতিটিতেই স্পট রয়েছে, কাটা-ফুটো আছে। কেউ ফ্রেশ চামড়া দেয়নি। তাই বেশি দাম দেওয়া সম্ভব না।”
খুলনা জেলা কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. বাবর বলেন, “এবার অনেক গরুর চামড়ায় পক্সের দাগ রয়েছে। কেউ কেউ বলছে করোনার দাগ। এসব স্পট থাকলে ব্লু করলেই নেট হয়ে যায়, মানে চামড়া নষ্ট হয়। তাই কম দামে নিতে হচ্ছে।”
পশু বিভাগ বলছে, রোগ থাকলেও 'করোনা' নয়। খুলনা বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ পরিচালক ডা. নুরুল্লাহ মো. আহসান বলেন, “গরুর মধ্যে করোনা শনাক্ত হওয়ার তথ্য ভিত্তিহীন। তবে লাম্পি স্কিন ডিজিজ (LSD) থাকতে পারে। যে গরু LSD আক্রান্ত, তা কোরবানি দেওয়াও উচিত নয়। এই রোগের কারণে চামড়ায় দাগ পড়ে এবং ব্যবসায়ীরা দাম কমিয়ে দেয়। কিন্তু একে করোনা বলা ভুল।”
লবণের খরচও সমস্যা বাড়াচ্ছে। শ্রমিক মজিদ সরদার বলেন, “একটা চামড়ায় দুইবার লবণ দিতে হয়। লাগে ৮-১০ কেজি লবণ। এখন লবণের কেজি ২৫ টাকা। শুধু লবণেই পড়ে যাচ্ছে ২০০ টাকার বেশি। এর সঙ্গে শ্রম, পরিবহন ধরলে ক্রয়-বিক্রয়ে মেলানো যাচ্ছে না।”
এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে শুধু বিক্রেতা নয়, পুরো কাঁচা চামড়ার বাজারেই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এফপি/রাজ