যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে অভিবাসনবিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ হাজার ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন।
শনিবার সন্ধ্যা থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউজের সীমান্ত নিরাপত্তা উপদেষ্টা টম হোম্যান।
শুক্রবার রাত থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ শনিবার আরও ছড়িয়ে পড়ে শহরের সাউথইস্ট অঞ্চলের প্যারামাউন্ট এলাকায়। শতাধিক বিক্ষোভকারী অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগকারী সংস্থা (আইসিই)-এর বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে। কেউ মুখে গ্যাস মাস্ক পরে, কেউবা মেক্সিকোর পতাকা উড়িয়ে প্রতিবাদ জানায়। বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাস ছোড়ার ঘটনা ঘটে।
আইসিই জানিয়েছে, শুক্রবার তাদের অভিযানে অন্তত ৪৪ জন ‘অভিবাসন আইন লঙ্ঘনকারী’কে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো দাবি করেছে, অনেক বৈধ স্থায়ী বাসিন্দাও এই অভিযানের শিকার হয়েছেন।
হোয়াইট হাউজের উপপ্রধান স্টিফেন মিলার এই বিক্ষোভকে “যুক্তরাষ্ট্রের আইন ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ” বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, “সরকারি ভবনে হামলা, টায়ার ছিঁড়ে ফেলা, গ্রাফিতি—এসব হিংস্র বিদ্রোহেরই প্রমাণ।”
যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগ (ডিএইচএস) দাবি করেছে, শুক্রবার অন্তত এক হাজার দাঙ্গাকারী একটি ফেডারেল ভবন ঘিরে আইসিই কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়। তবে রয়টার্স ও অন্যান্য সংবাদ সংস্থা এই দাবির সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তকে “উসকানিমূলক” ও “অপ্রয়োজনীয় সামরিকীকরণ” বলে আখ্যা দেন। লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র ক্যারেন ব্যাস বলেন, “এই অভিযান আমাদের শহরের শান্তি বিঘ্নিত করছে। আমরা এই বর্বর কৌশল সহ্য করব না।”
ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে লিখেছেন, “যদি নিউসাম ও মেয়র ব্যাস তাদের কাজ না করতে পারেন, তাহলে ফেডারেল সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেবে—দাঙ্গা ও লুটপাট যেভাবে দমন করতে হয়, সেভাবেই।”
অভিবাসন অধিকার সংগঠন চিরলার নির্বাহী পরিচালক অ্যাঞ্জেলিকা সালাস জানান, শুক্রবার আটক ব্যক্তিদের সঙ্গে আইনজীবীরা এখনও দেখা করতে পারেননি, যা ‘গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য হুমকি’। তার ভাষায়, “এই অভিযান শুধু আইনি অধিকার লঙ্ঘন নয়, এটি একটি রাজনৈতিক বার্তা—ভয় দেখানোর জন্য চালানো হচ্ছে।”
চিরলার দাবি, আইসিই সদস্যরা শহরের বিভিন্ন হোম ডিপো দোকানের পার্কিং লটে অস্থায়ী ক্যাম্প বসিয়ে ফুটপাত ব্যবসায়ী ও দিনমজুরদের লক্ষ্য করে অভিযান চালিয়েছে। অভিযানে অন্তর্ভুক্ত ছিল একটি পোশাক কারখানা ও একটি গুদামও।
ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে আইসিই’র দৈনিক অভিযান সংখ্যা ৩ হাজারে উন্নীত করা হয়েছে। তবে এসব অভিযানে বৈধ অভিবাসীদেরও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে।
স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর ফুটেজে দেখা গেছে, হেলমেট ও গ্যাস মাস্ক পরা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সড়কে সারিবদ্ধভাবে অবস্থান নিয়েছে। আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে উল্টানো শপিং কার্ট, পোড়ানো গাড়ি ও ধোঁয়া ওঠা গ্রেনেডের খোলস।
এখন পর্যন্ত কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে সে বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কিছু জানানো হয়নি।
লস অ্যাঞ্জেলেসে চলমান বিক্ষোভ ও ট্রাম্প প্রশাসনের জবাব কেবল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রশ্ন নয়, এটি একটি গভীর রাজনৈতিক, মানবাধিকার ও ফেডারেল বনাম রাজ্য ক্ষমতার দ্বন্দ্বে রূপ নিয়েছে। পরিস্থিতি কতদূর গড়াবে, তা নির্ভর করছে উভয় পক্ষের পরবর্তী পদক্ষেপের উপর।
এফপি/রাজ