চট্টগ্রামের ব্যস্ত ষোলশহর রেলস্টেশনটি আজ যাত্রীদের কাছে পরিচিত এক অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতার প্রতিচ্ছবি হিসেবে। স্টেশনের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ময়লা-আবর্জনা, পচা গন্ধে ভারী বাতাস, আর ভাঙাচোরা আসবাবপত্র- সব মিলিয়ে এ যেন এক অব্যবস্থাপনার নিদর্শন।
তবুও অবাক করার মতো বিষয় হলো, এই স্টেশন পরিষ্কারের জন্যই সম্প্রতি কোটি টাকার চুক্তি হয়েছে, তাও আবার কোনো টেন্ডার ছাড়াই!
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে যেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তার মেয়াদ ২০২৪ সালের এপ্রিলে শেষ হলেও পুনরায় নতুন কোনো দরপত্র আহ্বান না করে পূর্বের ঠিকাদারকেই দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ সরকারি ক্রয়বিধি অনুযায়ী, নতুন কার্যাদেশে অবশ্যই উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানের কথা বলা আছে।
যাত্রীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে স্টেশনে নিয়মিত কোনো পরিচ্ছন্নতাকর্মী চোখে পড়ে না। ওয়েটিং রুম, টয়লেট, প্ল্যাটফর্ম- সব জায়গায় ধুলো-ময়লার ছড়াছড়ি। অনেকে অভিযোগ করেছেন, বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও কার্যত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কোনো কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। বরং স্টেশনের পরিবেশ দিন দিন আরও অস্বস্তিকর হয়ে উঠছে।
একজন প্রতিদিন যাতায়াতকারী শিক্ষার্থী বলেন, মাঝেমধ্যে মনে হয় আমরা ময়লার ভেতর দিয়েই চলাফেরা করছি। অথচ শুনি পরিচ্ছন্নতার জন্য মোটা অঙ্কের বাজেট রয়েছে।
এ বিষয়ে রেলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ খুলতে চাননি। তবে একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, পরিচ্ছন্নতার বর্তমান চুক্তি আদৌ লিখিত নাকি মৌখিক, সেই সম্পর্কেও সংশয় রয়েছে। কোনো কাগজপত্র স্থানীয় দপ্তরে সংরক্ষিত নেই।
অন্যদিকে, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি বলে জানিয়েছেন, ফলে তার কাছ থেকেও বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এটি একটি পরিচিত চিত্র- দরপত্রবিহীনভাবে দীর্ঘদিন ধরে একটি নির্দিষ্ট ঠিকাদারকে কাজ দিয়ে যাওয়া হয়, যাতে জবাবদিহি ও প্রতিযোগিতা একেবারেই অনুপস্থিত থাকে। ফলে কাজের মান পড়ে যায়, আর সাধারণ মানুষ ঠকে।
ষোলশহর স্টেশন এখন শুধু একটি যোগাযোগ কেন্দ্র নয়, বরং একটি উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে- কীভাবে দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনা হাত ধরাধরি করে চলতে পারে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার নামে কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও যেখানে ধুলোই সবচেয়ে দৃশ্যমান বিষয়।
এফপি/রাজ