মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় কোটি টাকার একটি স্কুলভবন নির্মাণ প্রকল্পে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
কুতুবপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের একতলা ভবনের নির্মাণে শুরু থেকেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার এবং কারিগরি ত্রুটির অভিযোগ উঠলেও, দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নির্লিপ্ততা চোখে পড়ার মতো।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, নির্মাণাধীন ভবনের বিম সোজা না হয়ে মারাত্মকভাবে বাঁকা, যা ভবনের স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। নির্মাণকাজে ব্যবহৃত রড, বালু ও সিমেন্টের মান অত্যন্ত নিম্ন। এতে ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী ও অভিভাবকেরা।
প্রকল্পটি পেয়েছে স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমডি আশিকুজ্জামান। বরাদ্দ—১ কোটি ২৬ লাখ ৮১ হাজার ৫৫০ টাকা। অথচ এ বিশাল অর্থের কাজ শুরু থেকেই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ক্ষমতার অপব্যবহার করে কাজটি চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি—এমনই অভিযোগ উঠেছে বারবার।
একজন ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, স্কুলের মতো জায়গায় যদি এভাবে দুর্নীতি হয়, তাহলে ছেলেমেয়েরা নিরাপদ থাকবে কিভাবে? এটা তো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সঙ্গে প্রতারণা।
নির্মাণকাজে নিয়োজিত এক শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিমগুলো সোজা না। কাঠামো ঠিক নেই। কিছু বললে পরদিন থেকেই কাজ থেকে ছাঁটাই করে দেয়। তাই মুখ বন্ধ রাখতে হয়।
বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো. হাফিজুল ইসলাম বলেন, এ ভবন এলাকার মানুষের বহুদিনের প্রত্যাশা। ভবিষ্যতে চারতলা পর্যন্ত সম্প্রসারণের জন্য ভিত্তি করা হলেও, যেভাবে কাজ হচ্ছে, তাতে শিক্ষার্থীদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। শিক্ষা প্রকৌশল দপ্তরের দায়িত্বশীলদের অনুরোধ করবো, যেন তারা কঠোরভাবে বিষয়টি দেখেন।
তবে সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সবুজ বলেন, সিডিউল অনুযায়ী শতভাগ কাজ হচ্ছে। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ ভিত্তিহীন।
মেহেরপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী শাহীনুজ্জামান বলেন, আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে সরঞ্জামের মান যাচাই করে অনুমোদন দিয়েছেন। নিম্নমানের কিছু হয়নি।
কিন্তু জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল আহসান আরও বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের অভিযোগ শোনার বদলে নিজ অফিসে বসে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের ডেকে এনে হেনস্তা করার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এফপি/রাজ