দুর্নীতির তদন্ত শুরুর পরপরই পদ্মা অয়েল কোম্পানি পিওসিএলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গেছেন- এমনটাই দাবি করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
তিনি সেখান থেকেই ইমেইলের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। এ ঘটনা ঘিরে আলোচনা যখন তুঙ্গে, ঠিক তখনই অভিযোগ উঠেছে- প্রতিষ্ঠানটি এখনো দুর্নীতিপরায়ণ ঠিকাদার সিন্ডিকেটের দখলে।
দেশের অন্যতম প্রধান রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি বিপণন কোম্পানি পদ্মা অয়েল একসময় দেশের মোট জ্বালানি বাজারের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করত। এমনকি এককভাবে জেট ফুয়েল সরবরাহের দায়িত্বও পালন করত সংস্থাটি। কিন্তু বছর বছর দুর্নীতি, অদক্ষ ব্যবস্থাপনা ও লুটপাটে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান এখন শঙ্কাজনকভাবে নেমে এসেছে।
সূত্র জানায়, সাবেক এমডি মো. আবদুস সোবহান অসুস্থ স্ত্রীকে দেখার অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ১৪ মে ইমেইলের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র পাঠান। যদিও অনেকেই বলছেন, এটি ছিল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা এড়াতে একটি পরিকল্পিত পলায়ন। তার বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির তদন্তে উঠে এসেছে বিপিসির কিছু কর্মকর্তাকে ব্যবহার করে মনোনীত ঠিকাদারদের মাধ্যমে কাজ বণ্টনের অভিযোগ। এসব কার্যক্রমে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে বলেও দাবি সংশ্লিষ্টদের।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের ম্যানেজার অপারেশন মফিজুর রহমান।
বর্তমানে পদ্মা অয়েলের ঠিকাদার সিন্ডিকেট হিসেবে পরিচিত কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে ইনোভেটিভ অ্যাসোসিয়েটস, এস এ ইন্টারন্যাশনাল এবং এ এস বি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা হলেন আরিফ হোসাইন, সাদেক এবং জিয়া। অভিযোগ রয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণেই গত এক দশকের অধিক সময় ধরে চলেছে প্রায় সব বড় প্রকল্পের কাজ।
সাধারণ ঠিকাদাররা বলছেন, বিগত সরকারের আমলে ৩-৪টি প্রভাবশালী ঠিকাদার গ্রুপ দরপত্র প্রক্রিয়াকে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ করে সাধারণ ঠিকাদারদের কার্যত অচল করে দেয়। দরপত্র বের হওয়ার আগেই তারা কাজ ভাগ করে নিত, বিল ছাড়ের ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে বাধ্য করত, এমনকি একই ঠিকাদার ভিন্ন ভিন্ন নামে দরপত্রে অংশগ্রহণ করত- যা প্রকৃতপক্ষে প্রতিযোগিতা বিরোধী এবং জালিয়াতি।
এ বিষয়ে এক ঠিকাদার জাহাঙ্গীর জানান, ‘বিগত বছরগুলোতে পদ্মা অয়েলে আমরা নতুন কেউ কাজের সুযোগ পাইনি। সিন্ডিকেট করে সব নিয়ন্ত্রণ করছে কিছু অসাধু ঠিকাদার। একই প্রকল্পে একাধিক দরদাতা দেখানো হলেও সব কাজ নিয়ন্ত্রণ করে একটি গোষ্ঠী।’
অভিযোগের ব্যাপারে ঠিকাদার সিন্ডিকেটের একজন আরিফ হোসাইনকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘ই-জিপি এখন উন্মুক্ত, যে কেউ চাইলে দরপত্রে অংশ নিতে পারে।’ তবে তার বিরুদ্ধে ওঠা সিন্ডিকেটের অভিযোগ তিনি সরাসরি অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে পদ্মা অয়েলের মহাব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ ও প্রশাসন), মহাব্যবস্থাপক (প্রকল্প) সিএম জিয়াউল হাসানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সাধারণ ঠিকাদারদের দাবি, শুধু সাবেক এমডির বিরুদ্ধে নয়, তার সহযোগী এসব ঠিকাদারদের বিরুদ্ধেও দুদকের দ্রুত তদন্ত শুরু করা প্রয়োজন। যাতে তেল খাত থেকে দুর্নীতির শিকড় উপড়ে ফেলা সম্ভব হয়। তাদের আশা, বর্তমান সরকার ও প্রশাসন এই সিন্ডিকেট ভাঙার পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং তেল খাতকে দুর্নীতিমুক্ত করার কার্যকর উদ্যোগ নেবে।
এফপি/রাজ