ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে টানা চতুর্থ দিনের মতো নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভ করছেন তাঁর সমর্থকেরা।
রোববার (১৮ মে) সকাল থেকে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে সংগঠিত এই বিক্ষোভে নগর ভবনের প্রধান ফটকসহ সব প্রবেশপথে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে, ফলে ভবনের ভেতরে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী বা সেবাগ্রহীতা প্রবেশ করতে পারছেন না।
বিক্ষোভকারীরা জানান, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস প্রায় পৌনে দুই লাখ ভোটে বিজয়ী হন। তবে চলতি বছরের ২৭ মার্চ ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ওই ফল বাতিল করে ইশরাক হোসেনকে বৈধ মেয়র ঘোষণা করে। এরপর ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করে। তবে এখনো তাঁকে শপথ পড়ানো হয়নি।
বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, গেজেট প্রকাশের পরও শপথ না করিয়ে যে বিলম্ব করা হচ্ছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাঁরা জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। গতকাল নগর ভবনের মূল ফটক ও বিভিন্ন বিভাগের দপ্তরে তালা দেন ইশরাকের সমর্থকেরা। এতে নাগরিক সেবা-সংক্রান্ত সব কার্যক্রম বন্ধ ছিল। নগর ভবনের পাশাপাশি দক্ষিণ সিটির ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয়েও তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে ওই সব কার্যালয় থেকে দেওয়া নাগরিক সেবা বন্ধ হয়ে যায়।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনের ৩০ দিনের মধ্যে মামলা হয়েছিল। শেখ ফজলে নূর তাপস প্রভাব খাটিয়ে সেই মামলার প্রক্রিয়া থামানোর চেষ্টা করেন। আদালত তখন আওয়ামী লীগের প্রভাবাধীন ছিল। তবু আমরা সব আইনি প্রক্রিয়া মেনে জয়লাভ করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘গেজেট প্রকাশের ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো আমাকে শপথ গ্রহণ করানো হয়নি। অথচ আমি শপথ নিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত’।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ইশরাক হোসেন জনগণের ভোটে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর শপথে বিলম্ব, জনগণের রায়ের প্রতি অবজ্ঞা। আমরা তাঁকে দ্রুত মেয়র হিসেবে দেখতে চাই।’ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া সাইদুর রহমান বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক জনগণের ভোটে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। আমরা তাকে দ্রুত মেয়র হিসেবে দেখতে চাই। তার বিষয়টি কত দিন এভাবে আটকে রাখবে? সরকারের কাছে আমাদের প্রশ্ন, কেন তাকে এখনও শপথ গ্রহণ করানো হচ্ছে না? শপথ যত দিন পড়ানো হবে না, তত দিন আমরা রাজপথ ছাড়ছি না। যদি এটা নিয়ে কোনও টালবাহানা হয়, আমরা আরও বড় কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।’
নগর ভবনের পাশাপাশি দক্ষিণ সিটির ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয়েও তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ওই সব কার্যালয় থেকে দেওয়া নাগরিক সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। এসব সেবার মধ্যে রয়েছে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্সের আবেদন ও নবায়ন, কর প্রদান ইত্যাদি।
বিক্ষোভকারীরা জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। তাঁরা হুঁশিয়ারি দেন, যদি শপথ নিয়ে কোনো টালবাহানা করা হয়, তাহলে তাঁরা আরও বড় কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।
ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণ বিলম্বিত হওয়ায় তাঁর সমর্থকেরা টানা চতুর্থ দিনের মতো নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভ করছেন। নগর ভবনের প্রধান ফটকসহ সব প্রবেশপথে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় সেবা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। বিক্ষোভকারীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এফপি/রাজ