নোয়াখালীর মাইজদীতে বাসচালক মো. সোহেল এখন চিকিৎসাধীন, তবে অবস্থার উন্নতি হচ্ছে ধীরে ধীরে। ঈদের দিন রাতে ঘটে যাওয়া এই ভয়ংকর ঘটনার পেছনে ছিল একদল মোটরসাইকেল আরোহী তরুণ, যারা শুধুমাত্র ‘পাশ না পাওয়ার’ ক্ষোভে একটি চলন্ত বাসকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার ধাওয়া করে এবং শেষমেশ চালকের মাথায় ইট ছুড়ে মারে।
একুশে পরিবহনের বাসটি ঢাকা থেকে নোয়াখালীর উদ্দেশে যাচ্ছিল। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট পার হওয়ার পর থেকেই ৮ থেকে ১০টি মোটরসাইকেলে করে একদল তরুণ বাসটির পিছু নেয়। পুলিশের ভাষ্যমতে, স্রেফ সাইড না দেওয়ায় রাগে ফুঁসে উঠে তারা।
বাসটি চালাচ্ছিলেন মো. সোহেল। মাঝরাতে যাত্রীদের নিরাপত্তা মাথায় রেখে তিনি গতি কমাননি। তরুণদের ধাওয়ার মুখে বাসটি চালিয়ে যাচ্ছিলেন সোনাইমুড়ী উপজেলার ছাতারপাইয়া রাস্তার মাথা পর্যন্ত। সেখানেই মোটরসাইকেল আরোহীরা বাসটিকে থামাতে না পেরে একের পর এক ইট ছুড়তে শুরু করে। একপর্যায়ে চালকের মুখে আঘাত লাগে- চোয়াল থেঁতলে যায়, মাথায় লাগে দুটি ইট। পরে জানা যায়, সোহেলের মাথা ও মুখে ৩১টি সেলাই দিতে হয়েছে, আর ভেঙে গেছে নিচের পাটির দুটি দাঁত।
তবে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সোহেল গাড়ি থামাননি। সহকারী রাহাত জানান, রক্তাক্ত মুখ নিয়েও সোহেল গাড়ি চালিয়ে যান নোয়াখালী সুধারাম থানার সামনে পর্যন্ত। সেখানেই যাত্রীরা নিরাপদে নেমে থানায় আশ্রয় নেন।
বাসটির মালিক মো. জহিরুল ইসলাম অভিযোগ জানাতে গিয়ে পড়েছেন প্রশাসনিক জটিলতায়। প্রথমে তিনি যান সুধারাম মডেল থানায়, সেখান থেকে পাঠানো হয় সোনাইমুড়ী থানায়। সেখান থেকে আবার বলা হয় লাকসাম থানায় যেতে। ফলে মামলা করার কার্যক্রম জটিল হয়ে পড়ে।
ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ঈদের রাতে একটি দোকানের সামনে একদল তরুণ মোটরসাইকেল নিয়ে ছিলেন। সেখানেই পাশ না পাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন তারা। কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের সুপার মো. খায়রুল আলম জানিয়েছেন, এই তরুণদের কেউ ডাকাত নয়। তবে তিনি বলেন, হাইওয়ে পুলিশের তদন্ত বা মামলা নেওয়ার এখতিয়ার নেই।
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল ফারুক বলেছেন, এ বিষয়ে তাঁরা কাজ করছেন এবং বাসমালিক মামলা করতে চাইলে তা গ্রহণ করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ মামলা করতে পারেননি।
এই ঘটনায় সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন উঠেছে- একটি ছোট বিষয়কে কেন্দ্র করে যদি এমন সহিংসতা হয়, তাহলে রাস্তায় নিরাপদে চলাচল কতটা সম্ভব? যাত্রীদের রক্ষা করতে গিয়ে নিজেই গুরুতর আহত হয়েছেন একজন চালক, অথচ অপরাধীরা এখনও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
এফপি/রাজ