‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে গাইবান্ধাসহ উত্তরের পাঁচ জেলায় চলছে ৪৮ ঘণ্টার লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি। লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, নীলফামারী ও গাইবান্ধার তিস্তাপাড়ে হাজারো মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর তিস্তা ব্রিজ পয়েন্টসহ পাঁচ জেলার ১১ স্থানে হচ্ছে। তিস্তাপাড়ের কৃষক, জেলে, মাঝি, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ দাবি আদায়ে অংশ নিয়েছেন।
তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, তিস্তা রংপুর অঞ্চলের জীবনরেখা। কিন্তু বর্ষায় ভয়াবহ বন্যা আর শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকটে দুই তীরের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে। ন্যায্য পানির হিস্যা ও মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়নের জন্য আমরা আন্দোলনে নেমেছি। সরকার যদি দ্রুত দাবি মেনে না নেয়, তাহলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার অন্যতম সমন্বয়ক মাহমুদুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, তিস্তা আমাদের জীবন-জীবিকার অংশ। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা আবাদ করতে পারছেন না, জেলেরা মাছ পাচ্ছেন না, মাঝিরা নৌকা চালানোর কাজ হারাচ্ছেন। তাই সবাই মিলে ন্যায্য পানির দাবিতে তিস্তাপাড়ে অবস্থান নিয়েছি। সরকার দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আন্দোলন আরও ব্যাপক হবে।
হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম বলেন, তিস্তার পানি না থাকায় কৃষকরা সেচ দিতে পারছেন না, জেলেরা মাছ পাচ্ছেন না, মাঝিরা নৌকা চালাতে পারছেন না। এই অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না। সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
হরিপুর গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, আমাদের জমি বালুচরে পরিণত হয়েছে। পানি না থাকায় ফসল ঠিকমতো ফলাতে পারছি না। ধান লাগাই, কিন্তু সময়মতো সেচ দিতে না পারায় ফলন কমে যাচ্ছে। এইভাবে আর কতদিন চলবে? সরকার দ্রুত তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে উদ্যোগ নিক।
রাঘব গ্রামের জেলে মোবারক আলী বলেন, একসময় তিস্তায় প্রচুর মাছ ছিল, আমরা মাছ ধরেই সংসার চালাতাম। এখন নদীতে পানি নেই, মাছও নেই। পরিবারের ভরণ-পোষণ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমরা চাই তিস্তা বাঁচুক, তিস্তার পানি ফিরে আসুক।
তিস্তাপাড়ের বাসিন্দা কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি, তিস্তার পানির জন্য লড়াই চলছে। শুষ্ক মৌসুমে নদীটা বালির মাঠ হয়ে যায়, বর্ষায় ভয়াবহ বন্যা আঘাত হানে। তিস্তা যদি বাঁচে, তাহলে এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। আমরা চাই সরকার দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নিক।
ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, তিস্তা বাঁচলে এই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যও বাড়বে। নদী শুকিয়ে যাওয়ার ফলে পরিবহন, কৃষি, মৎস্য—সবকিছুতেই ক্ষতি হচ্ছে। ব্যবসার জন্য ভালো পরিবেশ দরকার, আর তার জন্য তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত হওয়া জরুরি।
এদিকে কর্মসূচিকে আরও প্রাণবন্ত করতে সাংস্কৃতিক ও গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। পালাগান, সারিগান, ভাওয়াইয়া, লালনগীতি, লোকসংগীতের পাশাপাশি হা-ডু-ডু, ঘুড়ি উড়ানো, গোল্লাছুট ও দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এফপি/এমআই