Dhaka, Tuesday | 4 November 2025
         
English Edition
   
Epaper | Tuesday | 4 November 2025 | English
এই নির্বাচন আমার শেষ নির্বাচন: মির্জা ফখরুল
বেতন বাড়ল নারী ক্রিকেটারদের, কে কত পাচ্ছেন
আজকের স্বর্ণের দাম
সাগরে লঘুচাপ, বাড়তে পারে বৃষ্টির প্রবণতা
শিরোনাম:

সনদ-গণভোট নিয়ে সমঝোতার দায়িত্ব দলগুলোকে দিল সরকার

প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৫, ১০:০৪ এএম আপডেট: ০৪.১১.২০২৫ ১০:০৮ এএম  (ভিজিটর : ৩৬)
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভা

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভা

জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি এবং গণভোটের সময় নিয়ে বিরোধে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও সমঝোতার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোকে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল সোমবার উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি সভার পর জানানো হয়, সরকার মধ্যস্থতা করবে না। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে আলোচনায় সমঝোতার পথ বের করতে হবে। এক সপ্তাহের মধ্যে না পারলে সরকার সনদ ও গণভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।


প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে বৈঠকের পর দুজন উপদেষ্টা বলেন, সমঝোতার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে পরিষদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে।


তারা জানান, গত বৃহস্পতিবারের বৈঠকে প্রায় সব উপদেষ্টা একই দিনে নির্বাচন এবং গণভোট আয়োজনে মত দিলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব প্রধান উপদেষ্টাকে দেওয়া হয়েছিল। দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টারা বৃহস্পতিবার থেকে চার দিন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপির সঙ্গে কথা বললেও সমঝোতা হয়নি। আগামী নির্বাচন থেকে পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনে নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) প্রত্যাহারে বিএনপিকে রাজি করানো যায়নি। উচ্চকক্ষে পিআরের দাবি পূরণ হলে নিম্নকক্ষে পিআরের দাবি জামায়াত ছাড়তে রাজি হলেও ঘোষণা দিতে রাজি হয়নি। তাই সোমবারের বৈঠকে সপ্তাহখানেক সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টাও এতে একমত।


আলোচনার জন্য সাত দিন সময় দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে জামায়াতসহ আট দল। তবে তারা মধ্যস্থতার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এনসিপি অভিযোগ করেছে, সরকারের একটি পক্ষ ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের বাইরে গিয়ে নিজেরাই ঐকমত্য কমিশন হওয়ার চেষ্টা করছে। সংস্কার নিয়ে সরকার সাপ-লুডু খেলছে। উপদেষ্টা পরিষদের আলোচনার আহ্বানে বিএনপি প্রতিক্রিয়া জানায়নি।


উপদেষ্টার দূতিয়ালিতে কাজ হয়নি

সাত মাস সংলাপের পর গত ১৭ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরিত জুলাই সনদে সংস্কারের ৮৪টি প্রস্তাব রয়েছে। পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন পদ্ধতিসহ ১৫ প্রস্তাবে বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে। দলটির দাবিতে স্বাক্ষরের আগের দিন তা সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বলা হয়, যে দল যে বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, ক্ষমতায় গেলে সেই অনুযায়ী


সংস্কারের এখতিয়ার রাখবে

২৮ অক্টোবর ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে যে সুপারিশ করেছে, তাতে যুক্ত সনদে নোট অব ডিসেন্ট থাকলেও নেই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশের খসড়ায়। দ্বিতীয় খসড়ার তপশিলে সংবিধান সংশোধন-সংক্রান্ত ৪৮টি সংস্কার প্রস্তাব যুক্ত করা হয়েছে। এ খসড়া অনুয়ায়ী গণভোট হবে আদেশ এবং এই তপশিলের ওপর। থাকবে না নোট অব ডিসেন্ট।


বিএনপি একে প্রতারণা আখ্যা দিয়ে নির্বাচনের দিনে গণভোট চেয়েছে। জামায়াত নোট অব ডিসেন্টমুক্ত তপশিলের ওপর নভেম্বরে গণভোট চায়। এনসিপিও নোট অব ডিসেন্ট চায় না গণভোটে। এ নিয়ে বিরোধ চলছে দলগুলোর মধ্যে।


এ বিরোধ কমাতে গত বৃহস্পতিবারের বৈঠকের পর পাঁচজন উপদেষ্টাকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সোমবারের বৈঠকের পর একাধিক উপদেষ্টা বলেছেন, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একাধিক আলোচনায় সমঝোতা সম্ভব হয়নি। তারা কিছু বিষয়ে সম্মত হলেও কিছু বিষয়ে ছাড় দিতে রাজি নয়। এ জন্য আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। তাই আলোচনার ভার দলগুলোর ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তারাই সিদ্ধান্ত নিক।


একজন উপদেষ্টা বলেন, জুলাই সনদের অংশীদার প্রতিটি দল ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের অগ্রসৈনিক। উপদেষ্টারা মনে করছেন, তারা জেদের কারণে ছাড় দিতে পারছে না। দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, তারা মনে করে, ছাড় গেলে রাজনৈতিক অবস্থান নষ্ট হবে। আবার পারস্পরিক অবিশ্বাস, সন্দেহ রয়েছে। তাই কেউ ছাড়ের ঘোষণা দিতে রাজি নয়। জেদ যাতে কমে, সে জন্যই এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে।


গণভোট নিয়ে এবার উপদেষ্টাদের মতভিন্নতা

গত বৃহস্পতিবারের বৈঠকে উপস্থিত ২২ উপদেষ্টার প্রায় সবাই একই দিনে গণভোট এবং নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছিলেন। তবে গতকালের বৈঠকে কয়েকজন উপদেষ্টা সেই অবস্থান থেকে সরে আসেন। অন্তত তিনজন উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা থাকলে জাতীয় নির্বাচনের আগেও গণভোট করা যেতে পারে।


তারা যুক্তি দিয়ে প্রশ্ন তোলেন, গণভোট না হলে সংস্কার কীভাবে বাস্তবায়ন হবে? তারা বলেন, বিশেষ করে পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়টি সুরাহা করতে নির্বাচনের আগে গণভোট করা প্রয়োজন। ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করে, এর আগে গণভোট করা যায় কিনা তা দেখা উচিত। বৈঠক শেষে অন্য এক উপদেষ্টা বলেন, অধিকাংশ উপদেষ্টা জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোটের পরামর্শ দিয়েছেন। কয়েকজন আগে করার কথা বলেছেন।


ঐকমত্য কমিশন আদেশের প্রথম খসড়া অনুযায়ী, আগামী সংসদের সংবিধান সংস্কার পরিষদ ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার না করলে সংবিধান সংশোধনের খসড়া বিল পাস বলে গণ্য হবে। গণভোট হবে আদেশ ও খসড়া বিলের ওপর। গতকালের বৈঠকে একাধিক উপদেষ্টা অভিমত জানিয়েছেন, দ্বিতীয় খসড়া গ্রহণ করা উচিত হবে। যেখানে পরিষদের জন্য জুলাই সনদ অনুযায়ী সংস্কার নির্দেশনামূলক রাখা হয়েছে।


বিএনপি আদেশ জারির বিরুদ্ধে। জামায়াত ও এনসিপি আদেশের প্রথম খসড়া অনুযায়ী সংস্কারের বাধ্যবাধকতা চায়। দুটি দলই চায় রাষ্ট্রপতি নয়; আদেশ জারি করবে গণঅভ্যুত্থানে গঠিত সরকার। একাধিক উপদেষ্টা জানান, এসব বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়নি। এক সপ্তাহে সমঝোতা না হলে সরকার একতরফা সিদ্ধান্ত দেবে।


যা বললেন উপদেষ্টারা

বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সরকারের সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। এ সময় উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আদিলুর রহমান খান ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।


আসিফ নজরুল বলেন, দীর্ঘদিন আলোচনা করার পরও কয়েকটি সংস্কার বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে। এ ছাড়া গণভোট কবে ও তার বিষয়বস্তু কী হবে এসব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তা নিয়ে সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে গণভোট কবে হবে, বিষয়বস্তু কী হবে, জুলাই সনদে থাকা নোট অব ডিসেন্টের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে এসব নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন বলে উপদেষ্টা পরিষদ মনে করে। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি নিজেদের উদ্যোগ আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে, সম্ভব হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। দিকনির্দেশনা পেলে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত সহজ হবে।


আসিফ নজরুল আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কালক্ষেপণের সুযোগ নেই। উপদেষ্টা পরিষদ ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেছে। এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে একটু সময় দিতে চাই।


আলোচনায় ব্যর্থ হলে সরকার কী করবে প্রশ্নে আসিফ নজরুল বলেন, আলটিমেটাম দিইনি; আহ্বান জানিয়েছি। আমরা অপেক্ষা করব। তারপর সরকার পদক্ষেপ নেবে।


সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনার আয়োজন করবে কিনা প্রশ্নে আইন উপদেষ্টা বলেন, সরকার বহু আলোচনা করেছে। সরকার আর কোনো আয়োজন করতে যাচ্ছে না। ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ১৫ বছর নিজেরা আলোচনা করে বহু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা অত্যন্ত প্রতিকূল সময়ে একসঙ্গে আন্দোলন করেছে, নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তারা নিজেরা আলোচনা করে ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা দেবে এ প্রত্যাশা সরকার করছে। তারা যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, অবশ্যই সরকার সরকারের মতো সিদ্ধান্ত নেবে।


এফপি/অ

সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝