Dhaka, Friday | 6 June 2025
         
English Edition
   
Epaper | Friday | 6 June 2025 | English
ঘরের মাঠে অভিষেকে হামজার গোল
দাড়িপাল্লা প্রতীক ফেরত পাচ্ছে জামায়াত ইসলামী: নির্বাচন কমিশন
ঈদ উৎসবে জমজমাট ওয়ালটন ফ্রিজের বিক্রি
এখন থেকে ভুল সংবাদ পরিবেশন করলে ব্যবস্থা: আজাদ মজুমদার
শিরোনাম:

সুব্রত বাইন ও মাসুদ মোল্লাকে কুষ্টিয়ায় আশ্রয়দাতা হেলাল ধরাছোঁয়ার বাইরে

প্রকাশ: বুধবার, ৪ জুন, ২০২৫, ১১:৪৯ এএম  (ভিজিটর : ১০)

সুব্রত বাইন আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকার রেড নোটিশ প্রাপ্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। যার বিরুদ্ধে প্রায় ৩০টির অধিক খুনের মামলা রয়েছে। প্রায় সব মামলাতেই সাজাপ্রাপ্ত তিনি।

গত ২৭ মে কুষ্টিয়া শহরের কালিশংকরপুর এলাকার সোনারবাংলা সড়কের একটি তিনতলা বাড়ি থেকে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী তারই সহযোগী মোল্লা মাসুদসহ গ্রেফতার হন তিনি।

সুব্রত বাইনদের মত শীর্ষ সন্ত্রাসী আটকের সংবাদ দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। তবে সুব্রত বাইনের মত শীর্ষ সন্ত্রাসী আটকে জনমনে যতটা না আলোচনার জন্ম দেয় তার চেয়ে বেশি আলোচিত হয় কুষ্টিয়া থেকে আটকের বিষয়। জনমনে প্রশ্ন সুব্রত বাইনদের মত শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কীভাবে কুষ্টিয়াকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বেঁছে নেয়। কাদের ছত্রছায়ায় তাদের আগমন, তাদের মিশনই বা কী?

সহযোগিসহ সুব্রত বাইনকে আটকের পর তার মিশন সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বরাতে অনেক কিছু উঠে আসলেও কুষ্টিয়ায় কীভাবে আসেন, কেনই বা আসেন পরিস্কার তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, সুব্রত বাইন ও তার সহযোগী যে বাড়ি থেকে আটক হয়েছেন সেই বাড়িটি ভাড়া করে দেন হেলাল উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। তিনি সুব্রত বাইন যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তার দক্ষিণ পাশের তিনতলা বাড়ির বাসিন্দা। যে বাড়ি থেকে সেনাবাহিনী নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনী উদ্ধার করে সিসি টিভির ডিভাইসসহ গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট।

দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীকে কুষ্টিয়ায় আশ্রয়দাতা হেলাল উদ্দিন এক রহস্যময় ব্যক্তি। পেশায় পার্টস ব্যবসায়ী হলেও তার রয়েছে আন্ডারওয়ার্ল্ড কানেকশন। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বাড়ী ভাড়া, বাসা থেকে খাবার রান্না করে খাওয়ানো ও দেখভালের দায়িত্বে থাকা হেলালকে নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সেনাবাহিনীর এতবড় অভিযানের পরও হেলাল গ্রেফতার না হওয়ায় সুব্রত বাইনদের কুষ্টিয়া অবস্থান সম্পর্কে রয়েছে ধোয়াশা। যে এলাকা হতে গ্রেফতার হয়েছে সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ সেই কালিশংঙ্করপুর এলাকার মানুষও চরম ভীতির মধ্যে রয়েছে।

তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে কুষ্টিয়া হতে গ্রেফতার হওয়ায় শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জিজ্ঞাসাবাদে তাদের মিশন সম্পর্কে জানিয়েছে। তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা করার পরিকল্পনা করছিল। কুষ্টিয়ায় আস্তানা গড়ে তোলার বিষয়টি পরিস্কার হতে আশ্রয়দাতা হেলালকে গ্রেফতারের অভিযান চলছে। বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। হেলালের বিষয়েও খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।

২৭ মে ভোর থেকে পরিচালিত সেনাবাহিনী নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর অভিযানে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ আটকের পর থেকেই ঘুরে ফিরে আসে হেলালের নাম। কারণ ওই হেলালের মাধ্যমেই সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ কুষ্টিয়া শহরের কালিশংকরপুর এলাকার সোনারবাংলা সড়কের তিনতলা ওই বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে ওঠেন। বাড়িটি চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা পৌরসভার প্রয়াত মেয়র মীর মহিউদ্দিনের। হেলালের পরিবারের সাথে প্রথম মোল্লা মাসুদের পরিচয় হয়। তার পর আসেন সুব্রত বাইন। মূলতঃ হেলাল উদ্দিনের বাবা প্রয়াত আব্দুল কুদ্দুসের সাথেই প্রথমে পরিচয় ঘটে সুব্রত বাইন। বাংলাদেশের কোন এক ভারতীয় সীমান্তে বসবাস করতেন আব্দুল কুদ্দুস। এই আব্দুল কুদ্দুস গত ৩ মাস আগে মৃত্যুবরণ করছেন। ভারত সীমান্তে বসবাসের সুবাদে তার সাথে পরিচয় হয় সুব্রত বাইনের সাথে। সেই সূত্র ধরে সুব্রত বাইনদের সাথে যোগাযোগ। 

হেলালদের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। মূলতঃ জমি কেনাবেচা থেকেই কিছুটা আর্থিক স্বচ্ছলতা আসে তাদের। শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের সাথে পরিচয়ের পর থেকে কপাল খুলে যায় হেলালদের পরিবারের। সুব্রত বাইনের সহায়তায় পাড়ি জমান দুবাইয়ে। সেখানে সুব্রত বাইনও বেশ কয়েক বছর থেকেছেন। বছর দশেক দুবাইয়ে অবস্থান শেষে বছর দেড়েক আগে দেশে ফিরে আসেন হেলাল। অপরাধ জগতে যখন সুব্রত বাইনদের জয়জয়কার তখন মাঝে মধ্যেই হেলালদের বাড়িতে আসতেন সুব্রত বাইনেরা। মাস দেড়েক আগে বাসিন্দা হয়ে যান কালিশংকরপুরের আলোচিত ওই তিনতলা বাড়ির। যে বাড়ি থেকে ২৭ মে তারই সহযোগী মোল্লা মাসুদসহ আটক হন। উদ্ধার হয় অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলা বারুদ।

স্থানীয় বাসিন্দা মানিক হোসেন জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই হেলালের বাড়িতে একটি খয়েরি রঙের বিলাসবহুল গাড়ী আসত। ওই গাড়িতে যারা আসত তাদের মধ্যে সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদকে দেখেছি। আরো যারা আসতেন তাদের দেখলে চিনতে পারব। পরে মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন মীর মহিউদ্দিনের তিনতলা বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকতেন। তারা আটক হলে জানতে পারি ওরাই দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ।

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা শাহীন জানান, মানুষ হিসেবে ওরা সামাজিক ছিল না। প্রতিবেশীদের সাথে ভালো আচরণ করত না। হেলালের ছোট ভাই বেলাল যিনি দুবাই থাকেন, তিনিসহ অন্য ভাইগুলোর ব্যবহার একই রকম। তাই ঘৃণায় তাদের সাথে কেউ যোগাযোগ রাখত না। 

কুষ্টিয়ার যে বাড়ি থেকে সুব্রত ও মোল্লা মাসুদকে গ্রেফতার করা হয়, সেই বাড়িটি তিনিই ভাড়া করেছিলেন। বিশ্বস্ত মাধ্যমে জানা যায়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নাশকতা ও গুপ্ত হত্যার মিশনে অস্ত্র ও লজিস্টিক সাপোর্টের কাজটি তার করার কথা ছিলো।

রাজনৈতিকভাবে হেলালদের সখ্যতা গড়ে ওঠে আওয়ামী লীগের সাথে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফের সাথে তাদের পরিবারের বেশ ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হেলালের বড় ভাই রাশিদুল ইসলাম কুষ্টিয়া ইসলামীয়া কলেজে পিওন পদে যে চাকরিটা পেয়েছেন তা দিয়েছেন হানিফই। সেই সুবাদে রাশিদুলের পরিবারের সদস্যরা হানিফের প্রতি একটু বেশিই অনুগত। পিটিআই রোডের হানিফের বাড়ির সামনের টিনশেডে প্রায়ই বসতে তিনি। যেকারণে হানিফের চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আতার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরী হয়।  বিগত সংসদ নির্বাচনেও কোমর বেঁধে হানিফের পক্ষে কাজ করেছেন তারা।

হেলালের আশ্রয়ে থাকা সুব্রত বাইন এবং মোল্লা মাসুদের সাথে এক সুন্দরী নারীকেও দেখা গেছে ওই বাড়িতে। যে বাড়িতে থাকতেন সুব্রত বাইনেরা। সুব্রত বাইন আর মোল্লা মাসুদকে খুব একটা দেখা না গেলেও স্থানীয়রা ওই বাড়ির সামনে মাঝে মধ্যেই জামা-কাপড় মেলে দিতে দেখতে পান তাকে। তবে তিনি আসলে কে, কি তার পরিচয় তা জানতে পারেনি কেউই।

দ্বিতীয় তলায় থাকা কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের শিক্ষার্থী শাহীন আলম জানান, ওপর থেকে প্রায় দেখতে পেতাম একজন নারী প্রায়ই জামা কাপড় মেলে দেন। তিনি যে নিচতলাতেই থাকতেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি।

মঙ্গলবার সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ গ্রেপ্তারের পর প্রশ্ন ওঠে তাদেরই সাথে ওই ফ্লাটে থাকা সুন্দরী নারীটি আসলে কে? নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেউ কেউ বলেন ওই নারী সুব্রত বাইনের স্ত্রী হবে হয়ত। আবার কেউ বলেন তিনি আসলে তাদের রক্ষিতা। হেলালের মাধ্যমেই আগত ঘটে তার।

সুব্রতর নামে ৩০টিরও অধিক খুনের মামলা রয়েছে, যার প্রায় সবগুলোতেই এই সন্ত্রাসী সাজাপ্রাপ্ত, এছাড়াও অবৈধ অস্ত্র এবং চাঁদাবাজিসহ প্রায় ১০০ মামলার আসামিও তিনি। ২০০১ সালে পুরস্কার ঘোষিত এই শীর্ষ সন্ত্রাসী আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকার রেড কর্ণার নোটিশ প্রাপ্ত। ৫ আগষ্ট ২০২৪ পরবর্তী সময়ে তার আশ্রয়দাতারা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে যাওয়ার কারণে পেশাদার এই অপরাধী সাধারণ জনগণের সাথে মিশে যায়।

২০০১ থেকে ভারতে সেদেশের গোয়েন্দা সংস্থা আইবি’র (ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো) ছত্রছায়ায় ছিলেন সুব্রত। ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনী তাকে ব্যবহার করে বাংলাদেশে অবস্থান করা ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদি সংগঠন উলফা, নাগাল্যান্ড লিবারেশন ফ্রন্টের নেতাসহ, মোস্তাকিম চাপ কাবাব এর মালিক মোস্তাকিমকে হত্যা করিয়েছে। বিশেষ সূত্রমতে, বর্তমানে ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে কাজ করছে তিমোথি সুব্রত বাইন হিসেবে পরিচিত এই সন্ত্রাসী।

এফপি/রাজ
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝