Dhaka, Thursday | 2 October 2025
         
English Edition
   
Epaper | Thursday | 2 October 2025 | English
বৃষ্টি, বই আর এক কাপ কফি—আজ আন্তর্জাতিক কফি দিবস
২০২৬-এর শুরু থেকেই নতুন পে স্কেলে বেতন পাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা
বিসিবি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন তামিম
ইলিশ চুরির অভিযোগ, হাত-পা বেঁধে দুই শিশুকে নির্যাতন
শিরোনাম:

টানা চার মাসের বেশি জলাবদ্ধতায় চরম সংকট দুর্গোৎসবের আনন্দ নেই ভবদহবাসীর

প্রকাশ: শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১:৩২ পিএম  (ভিজিটর : ৪৬)

দোচালা টিনের ঘর। ঘরের চারপাশে কোমরসমান পানি। কালচে রং ধারণ করা সেই পানিতে ভাসছে ছোট বড় শ্যাওলা। পানি ঢুকেছে রান্নাঘর, গোয়ালঘর, বসতঘরসহ সবখানে। সড়ক থেকে বাড়িটিতে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম বাঁশের সাঁকো। গত চার মাসের বেশি সময় ঘরের ভেতর মাচা করে বসবাস করছেন যশোরের মনিরামপুর উপজেলার হাটগাছা গ্রামের কমলীনি মল্লিক। বোন ও এক ছেলে নিয়েই তাঁর সংসার।

শুধু বাড়ি নয় কমলীনির বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন দুই বিঘা আবাদি জমিও ডুবেছে। ফলে ফলেনি ফসল। জলাবদ্ধতার সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকায় এখন বড় চ্যালেঞ্জ। কমলীনির জীবন-সংগ্রামের কাছে জীবনের রং ফিকে হয়ে এলেও দুর্গোৎসবের আমেজে ভাটা পড়তে দিচ্ছেন না। চারপাশে অথৈই পানি নিয়েও নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা করছে ধর্মীয় রীতি রক্ষার।

কমলীনি মল্লিক বলেন,‘টাকাপয়সা নেই। বিলপার থেকে জোগাড় করা শাক আর ভাত খেয়েই কাটছে দিন। ধান-চাল কবে হবে, সেটা তো বলা যাচ্ছে না। ভুঁই (জমি) থেকেও আবাদের উপায় নেই। সব পানির তলে। এর মধ্যে মা (দেবী দুর্গা) আসছে, এক কাপড়ে যেয়ে তার মুখটা দর্শন করে আসব। বাজার-ঘাট কিছু হয়নি। সারা বছর আশা করে থাকি, মায়ের মুখটা দর্শনের। পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দ করে ভালোমন্দ খাবো। সেটা তো আর হচ্ছে না। কী করে করব, টাকাপয়সা না থাকলে। হিন্দু হয়ে যেহেতু জন্মেছি, অনুষ্ঠান তো করতেই হবে বছরের একটা দিন।’

যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। পলি পড়ে এই অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী নাব্য হারিয়েছে। ফলে নদী দিয়ে পানি নামছে না। এ অঞ্চলে যত দূর চোখ যায়, শুধু পানি আর পানি। ক্ষেতের ফসল, ঘেরের মাছ সবই কেড়ে নিয়েছে এই পানি।  হিন্দু অধ্যুষিত ভবদহ এলাকায় আবহমানকাল থেকে জমকালো আয়োজনে উদযাপন হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বড় উৎসব দুর্গাপূজা। 

ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে আজ শুরু হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। কিন্তু বেশির ভাগ বাড়িতেই পূজার আনন্দ নেই। যে কয়েকটি স্থানে হচ্ছে, সেটিও সীমিত।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্যমতে, জেলায় ৭০৬টি পূজামণ্ডপে এবার শারদীয় দুর্গোৎসব হচ্ছে। এর মধ্য ভবদহ এলাকায় ৩০টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব হবে।

ভবদহ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কয়েকটি স্থানে সীমিত পরিসরে পূজামণ্ডপে প্রতিমা বসানো হয়েছে। তবে নেই জাঁকজমক গেট কিংবা আলোকবাতি। পোড়াডাঙ্গা সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের সভাপতি নিতাই রায় বলেন, ‘সপ্তাহখানিক আগেও মন্দিরের আশপাশে পানি ছিল। এখন নেমেছে। বালি দিয়ে উঁচু করে পূজার অনুষ্ঠান করার আয়োজন করা হয়েছে। তবে জাঁকজমক নেই। মানুষের বাড়ি বাড়ি জল। ফসল না হওয়া, মাছের ঘের ডুবে যাওয়ায় বাড়ি বাড়ি অভাব। তাই চাঁদা না দেওয়ায় সীমিত পরিসরে পূজা করা হচ্ছে। পূজাকে কেন্দ্র করে পাশে সুন্দলী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে মেলা বসে। সেখানে হাঁটুসমান জল। তাই আনন্দ নেই আমাদের।’

পদ্মনাথপুর এলাকার মাধুরী রানী বলেন, ‘বাড়ি থাকতে পারছি না, তার ওপর পূজার আয়োজন! বাড়ির যা অবস্থা, পূজার উৎসব নেই মনে। এখন কী করে বাঁচব; কী করে দুটো রান্না করে খাবো সেটাই চিন্তা করছি। তার পরও মায়ের দর্শন দিয়ে আসতে হবেনে এক বেলা।’

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপংকর দাস রতন জানান, ভবদহ পাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে উৎসব নেই। তারা বাঁচতে চান। উৎসব না থাকলেও সরকারিভাবে নানা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। দ্রুত পানি নিস্কাশনের সঙ্গে টিআরএম চালু ও আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন তিনি। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, গতবারের তুলনায় এবার জলাবদ্ধতা কম। দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুতই ভবদহ অঞ্চলের পাঁচটি নদী পুনর্খনন করবে সেনাবাহিনী। পূজায় জলাবদ্ধতা নিরাসনে কাজ চলছে।

এফপি/অআ


সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝