Dhaka, Saturday | 14 June 2025
         
English Edition
   
Epaper | Saturday | 14 June 2025 | English
জামালপুরে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার
সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনে হাসিম-আনছার প্যানেল নির্বাচিত
শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রার পারদ উঠেছে ৩৭ ডিগ্রিতে
সম্ভব হলে ঢাকাতেও আবাসিক গ্যাস বন্ধ করে দিতাম: জ্বালানি উপদেষ্টা
শিরোনাম:

গণপূর্তের আবাসিক ভবনে হোটেল ব্যবসা

প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১২ জুন, ২০২৫, ১০:০০ পিএম  (ভিজিটর : ৫১)

কোন ধরণের ব্যবসায়িক অনুমতি ছাড়া সরকারি ভবনের ফ্ল্যাট নিয়ে হোটেল ব্যবসা চালানো হচ্ছে কক্সবাজারে। আবাসিক ভবনের নিচে পাকিং এলাকায় ডেক্স বসানো হয়েছে, আগত মেহমানদের জন্য রাখা হয়েছে কিছু সোফা। এভাবেই হোটেল ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বেশ ক’বছর ধরে। ফলে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।

পর্যটন শহর কক্সবাজারে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের আবাসিক ফ্ল্যাটে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চলছে এসব হোটেল ব্যবসা। সেখানে মন্ত্রণালয় ও গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের ফ্ল্যাটও রয়েছে বলে জানা গেছে। সেগুলো থেকে তারা আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগ রয়েছে, ভাড়া দেওয়া কয়েকটি ফ্ল্যাটে ‘অপরাধকর্ম’ চলে। সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এসব পরিচালনা করেছে একটি চক্র। যাতে হাত রয়েছে বড় কর্তাদের।

এদিকে হোটেল-মোটেল জোনে গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্বাবধানে থাকা একাধিক ফ্ল্যাটে চলছে অবৈধ যৌন ব্যবসাসহ নানান অপরাধ কর্মকাণ্ড। যদিও গণপূর্ত বরাদ্ধকৃত ভবনের নীতিমালায় উল্লেখ ছিল শুধুমাত্র মালিকগণ বসবাস করতে পারবেন অথবা নিকট আত্মীয়দের মাসিক ভাড়া দিতে পারিবেন। যেহেতু গণপূর্তের ভবনগুলো বাণিজ্যিক ভবন না। শুধুমাত্র আবাসিক ভবন হিসেবে ব্যবহারযোগ্য।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বেশ কয়েকজন ফ্ল্যাট মালিক নীতিমালাবিহীন পর্যটকদেরকে ভাড়া দিচ্ছেন। যার ফলে অবৈধভাবে যৌনকর্মী ও আবাসিক হোটেল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। পাশাপাশি এসব ফ্ল্যাটে মদ, ইয়াবা ও গাঁজা সেবনকারীদের আড্ডা চলছে বলেও অভিযোগ প্রত্যক্ষদর্শীদের।

সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার হোটেল মোটেল জোনে ১০টি আবাসিক ভবন নির্মাণ করেছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। ২০১৪ সালে এ কাজ শুরু হয়। পূর্ণতা পায় ২০১৯ সালে। ১০টি ভবনে মোট ৪৬৯টি ফ্ল্যাট রয়েছে। যা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বরাদ্দ নেয়। বরাদ্দ প্রাপ্তদের মধ্যে কয়েকজন জনপ্রতিনিধিও রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, ফ্ল্যাট বরাদ্দের ক্ষেত্রে সরকারের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করা হয়নি। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ৬টি ভবনকে বানানো হয়েছে আবাসিক হোটেল। এসব নিয়ন্ত্রণ করছে অসাধু একটি চক্র।

স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কয়েকজন বড় কর্তা এসব অনিয়মের নিয়ন্ত্রক। তাদের আশকারায় ফ্ল্যাটের উপ-ভাড়াটিয়ারা সরকারি ভবনে রামরাজত্ব করেছে। নীতিমালার ১২নং কলামে লেখা রয়েছে, ফ্ল্যাটে নিজ পরিবার, নির্ভশীল বৃদ্ধ মাতা পিতা এবং ভাই বোন বসবাস করতে পারবেন। আবাসিক উদ্দেশ্য ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

স্থানীয়দের অভিযোগ এবং সরেজমিনে দেখা গেল, দশটির মধ্যে ছয়টি ভবন আবাসিক হোটেল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সেগুলো হলো, ৪নং ভবন আল ফাতাহ রিসোর্ট, ৫নং ভবন হোটেল একুশের নীড়, ৬নং ভবন ওয়াটার প্যারাডাইস রিসোর্ট, ৭নং ভবন ওশান ফ্রেন্ড, ৯নং ভবন সমুদ্র বাড়ি ও ১০নং ভবন হোটেল দ্য গ্র্যান্ড স্যান্ডি। এসব ভবন মোটা অংকে ভাড়া দেয়া হয়েছে বিভিন্ন জনকে। যেটি গণপূর্ত নীতিমালার সুস্পষ্ট লংঘন।

একটি আবাসিক হোটেলের জন্য ১৪ প্রকার কাগজপত্র প্রয়োজন। যা সরকারি বিভিন্ন দপ্তর থেকে সংগ্রহ করে নিতে হয়। স্থানীয়দের প্রশ্ন, বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত ফ্ল্যাটসমূহে সব ডকুমেন্ট ঠিকঠাক আছে কিনা না? কোন ক্ষমতা বলে আবাসিক ভবনকে হোটেল বানানো হয়েছে?

জানা গেছে, কক্সবাজার কলাতলী এলাকায় ‘কক্সবাজার ফ্ল্যাট উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে তৈরি করে ৪৬৯টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। যার প্রতিটি ফ্ল্যাটের দাম ৩৪ থেকে ৪৫ লাখ টাকা।

জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো: আব্দুর রহমান তরফদার জানান, এই বিষয়ে আমার জানা নেই। যদি তারা ব্যবসায়িক পারমিশন নিয়ে করে তবে ভিন্ন বিষয় ।

এদিকে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, পর্যটন শহর কক্সবাজারে চার শতাধিক হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউজ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে দুই শতাধিক গেস্ট হাউজ রয়েছে, যেগুলো আবাসিক প্লট হিসেবে বরাদ্দ নেয়া হয়েছিল। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এমন শতাধিক হোটেল ও গেস্ট হাউজ মালিককে একাধিকবার নোটিশ দিয়েছে। তবে পরে আর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

জানা গেছে, শহরের কলাতলী এলাকায় গণপূর্ত বিভাগের কার্যালয় থেকে প্রধান সড়কের পূর্ব পাশ হয়ে আণবিক শক্তি কমিশনের কার্যালয় পর্যন্ত এলাকাটি ১৯৫৭ সালে ‘স্বাস্থ্য নিবাস’ রূপে উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা নেয় তৎকালীন সরকার। নকশা অনুযায়ী দুদফায় ১৭৭ দশমিক ৪৭ একর জমি অধিগ্রহণও করা হয়। ১৯৭৭ সালে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর সংশোধিত নকশা অনুযায়ী এ, বি ও সি এই তিন ব্লকে ভাগ করে ২২৬টি প্লট তৈরি করে।

১৯৭৯ সালে আবাসিক এলাকা হিসেবে ২১০টি এবং ২০০০ সালে ১৬টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই এলাকায় পরে আরো ২৭টি প্লট তৈরি করা হয়। তবে ২০১০ সালে প্লটগুলোয় আট তলাবিশিষ্ট ১০টি ভবন মিলিয়ে ৪৯০টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করে বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বর্তমানে ওইসব প্লটে গণপূর্ত বিভাগ ভবন নির্মাণের কাজ করছে। ১৯৭৯ ও ২০০০ সালে বরাদ্দ দেয়া আবাসিক প্লটগুলোয় এখন হোটেল ও গেস্ট হাউজ বানিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহজাহানকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। 

এ দিকে কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকার একটি গেস্ট হাউজের কর্মকর্তা জানান, মালিকদের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ এনে সর্বশেষ ২০১২ সালের ১৪ নভেম্বর দুদক নোটিস জারি করে। ২১ নভেম্বরের মধ্যে দুদক কার্যালয়ে হাজির হয়ে জবাব দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ দফায় ১৯টি গেস্ট হাউজকে নোটিশ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে আবাসিক হিসেবে প্লট বরাদ্দ নিয়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যবহার করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ; হোটেল/গেস্ট হাউজে অবস্থানরত বোর্ডারের প্রকৃত সংখ্যা কম দেখিয়ে ট্যাক্স ও ভ্যাট ফাঁকির মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আত্মসাৎ এবং অবৈধভাবে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন।

এফপি/রাজ/মু
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝