গোপালগঞ্জে সহিংস সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে জারি করা কারফিউ শনিবার সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শিথিল করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, বুধবার শহরের পৌর পার্ক এলাকায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রা ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এনসিপির কর্মসূচিকে ‘লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ হিসেবে ঘোষণার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তা প্রতিহত করার ঘোষণা দেন।
বিকেলে সমাবেশের শেষদিকে হঠাৎ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ, লাঠিচার্জ ও গাড়ি ভাঙচুর। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন।
নিহতদের মধ্যে দীপ্ত সাহা (২৫), রমজান কাজী (১৮), সোহেল মোল্লা (৩০), ইমন তালুকদার (২২) ও রিকশাচালক রমজান মুন্সি (১৮) রয়েছেন। নিহতদের দাফন প্রক্রিয়ায় ময়নাতদন্ত না হওয়ায় স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, গোপালগঞ্জ সদর, কাশিয়ানী ও কোটালীপাড়া থানায় সংঘর্ষ, পুলিশের কাজে বাধা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে। তিন মামলায় মোট আসামির সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। এ পর্যন্ত ১৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শনিবার সকালেও শহরের বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ ছিল। রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি ছিল খুবই সীমিত। গ্রেপ্তার আতঙ্কে অনেকে ঘর থেকে বের হননি। সদর থানার সামনে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের জটলা দেখা গেছে, তবে কাউকেই থানায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শহরে ১৪৪ ধারা বহাল রয়েছে। তবে শনিবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে কারফিউ ১৪ ঘণ্টার জন্য শিথিল করা হয়—সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগ এই হামলার জন্য এনসিপিকে দায়ী করেছে। অন্যদিকে এনসিপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এটি একটি পরিকল্পিত হামলা। দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি বিবৃতি দিয়েছে।
গোপালগঞ্জ- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান। এ সংঘর্ষের ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সরকারি সূত্রগুলো জানায়, বর্তমান উত্তেজনা প্রশমনে সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও যে কোনো সময় আবার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
এফপি/রাজ